সংলাপে সংরাগে; নির্বাচিত সৃজকের সাক্ষাৎকার

প্রশ্ন ১ : সাধারণ মানুষ ও একজন কবির মধ্যে পার্থক্য মূলত কোথায়?

আহমেদুর চৌধুরী: তেমন কোনো পার্থক্য আছে কি? সাধারণ মানুষের মধ্যেও তো এক ধরনের অন্তর্গত কাব্যবোধ থাকে, কবিতানুরাগ থাকে। আবার একজন কবি, সাধারণ অর্থে তিনিও তো একজন সাধারণ মানুষই। তবে অনুভব, অনুধাবন এবং তার বৈচিত্রময় প্রকাশের ধরনে নিঃসন্দেহে একজন কবি সাধারণ মানুষের ভীড়ের মধ্যে আলাদা হয়ে উঠেন, কিছুটা আলাদাভাবে জীবন যাপন করেন, জীবন এবং চারপাশকে আলাদাভাবে দেখেন। নানান কিসিমের ক্ষমতা, অসম দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি প্রভাবের কারণে অবশ্য এই পার্থক্যটুকু ক্ষেত্র বিশেষে বিশেষ এবং ক্ষেত্র বিশেষে গৌণ হয়ে উঠে। একজন কবি একই সাথে একজন লেখকও। লেখক তার নিজের কাছে সাধারণ মানুষের সত্তার বাইরে একজন লেখক হিসাবে দায়বদ্ধ থাকেন। এই দায়বদ্ধতা মূলত মানুষের সাথে, মানুষের জন্য। এবং মানুষকে ঘিরে থাকা চারপাশের প্রাণ ও প্রকৃতির জন্য। এই দায়বদ্ধতার ব্যাপারে সচেতনতা একজন লেখকের সাথে, একজন কবির সাথে সাধারণ মানুষের পার্থক্যকে স্পষ্ট করে দেয়।  

প্রশ্ন  : কল্পনার সঙ্গে কবির সম্পর্ক কী?

আহমেদুর চৌধুরী: সম্পর্ক খুবই নিবিড়। একজন কবি তো মূলত কল্পনার জগতেই বসবাস করেন। যে কারণে বেশিরভাগ কবিদের চিন্তা এবং জীবন যাপন আপাত বাস্তবতার সাথে সাংঘাতিকভাবে সাংঘর্ষিক রূপে দৃশ্যমান হয়। তবে এইসব দূরত্ব এবং সংঘর্ষের মধ্যেও আশ্চর্যজনকভাবে একজন কবি তার পরিপার্শ্ব, সমাজ বাস্তবতা, দর্শন এবং জীবনবোধকে বুঝতে পারেন সবচেয়ে গভীর এবং কার্যকরভাবে। কল্পনার জগতে বসবাস করা কবির বিক্ষিপ্ত বোঝাপড়াই একপর্যায়ে পরিণত হয় জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার নির্দেশিকায়। অর্থাৎ কল্পনা যদি হয় তেজি ঘোড়া, তাহলে পড়া-জানা-দেখা এবং এসবের সাথে চিন্তা-ভাবনার সংশ্লেষণ হলো বল্গা। একজন কবি, যার ভেতরে প্রকৃত অর্থেই কবিতা থাকে তিনি বল্গা ব্যবহার করে দ্রুতগামী ঘোড়া ছুটিয়ে আবিষ্কার এবং অবগাহন করেন েবাধের, সৌন্দর্যের নতুন নতুন প্রহেলিকায়। 

প্রশ্ন  : কবি বা শিল্পীর পক্ষে বিচ্ছিন্নতা কি অপরিহার্যকবিদের কি আপনার রহস্যময়’ বলে মনে হয়?

আহমেদুর চৌধুরী: জগৎ সংসারে অপরিহার্য বলে কোনো কিছু কি আছে? মানুষ; সে কবি হোক বা না হোক, চাপাবাজ হোক বা চেপে থাকা, কখনো না কখনো সে একা এবং বিচ্ছিন্ন। এই একাকিত্ব এবং বিচ্ছিন্নতা মানুষের মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একজন  কবি বা শিল্পীর বিচ্ছিন্নতা বোধ আমরা আলাদাভাবে অনুভব করতে পারি, প্রত্যক্ষ করতে পারি তার প্রকাশ ভঙ্গির কারণে। এবং কবিতায়,গদ্যে অথবা গানে যে বিচ্ছিন্নতা ধ্বনিত হয়, ঝংকৃত হয় তার সাথে আমরা একাত্ম বোধ করি আমাদের নিজেদের ভেতরের বিচ্ছিন্নতা বা একাকিত্বের সংসর্গে। কবি-অকবি নির্বিশেষে মানুষ মাত্রই রহস্যময়। মানুষ তার নিজের কাছেই নিজের রহস্যের কিনারা করতে পারে বলে মনে আমার হয় না। আবার মানুষ কখনও কখনও রহস্যের দেয়াল তুলে নিজেকে আলাদা করে রাখার জীবনও যাপন করে থাকে।

প্রশ্ন  : কবিতার ক্ষেত্রে আর্ট’ কতটা জরুরি? ‘আর্ট’ ও সত্য’ কি এক?

আহমেদুর চৌধুরী: এটা নির্ভর করে আর্টকে দেখার, গ্রহণ করার এবং বুঝতে পারার দৃষ্টিভঙ্গির উপর। কবিতার ব্যাখ্যা এবং ধরণ শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত হয় পাঠকের এবং সমালোচকের অনুভব, অনুধাবন এবং বিশ্লেষণে। কবিতার আর্ট, আর্টের ধরণ, জীবন ঘনিষ্ঠতা, মূর্ততা বা বিমূর্ততা ইত্যাদি কোনো কিছুই কবি নিজে থেকে নির্ধারণ করেন বলে আমার মনে হয় না। যে কারণে অর্থবহ এবং উপভোগ্য কবিতা নিজেই হয়ে উঠে একটি সার্থক আর্ট। এই মানব জীবনের বা এই বিশ্ব চরাচরের এমন কি আছে যে, যেখানে আপনি আর্ট খুঁজে পাবেন না?  সত্য শব্দকে আপনি যদি  পরম বলে কিছু না মনে করে থাকেন, যদি আপনি সত্যের বহুমাত্রিকতা এবং পারস্পর্যহীনতাকে  স্বীকার করেন তাহলে সত্যও একধরণের আর্ট। এই আর্ট জীবন ঘনিষ্ঠ যেমন, জীবন থেকে আপাত দূরের কুহকও তেমন। 

প্রশ্ন  : অনেকে বলেন আমাদের শিল্পকলা প্রধানত প্রেম-নির্ভর। এ-বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

আহমেদুর চৌধুরী: সামগ্রিক অর্থে প্রেম নির্ভর তো বটেই। জীবন, জীবনসংগ্রাম, এবং একের পর এক ব্যর্থতার পরও মানুষ যেভাবে জীবনের ঘানি টেনে যায়, ভেঙ্গে যাওয়া জীবনের টুকরোগুলোকে পুনরায় জড়ো করে জোড়া লাগানোর চেষ্টায় দিনাতিপাত করে; হৃদয়ে জীবনের প্রতি প্রেম না থাকলে মানুষ জীবন যাপনের এই ক্লান্তিহীন গ্লানি বহনের শক্তি অর্জন করতে পারতো না। এবং শিল্পকলা তো মানুষের বৃহত্তর জীবনেরই অংশ। এবং শিল্পকলার প্রকাশে রূপক হিসাবে, প্রতীক হিসাবে নারী প্রেম যেমন পরিস্ফুটিত হয়, তেমনি জীবন যাপনের নানান পর্যায়ের উপলব্ধিজাত প্রেমেরও প্রকাশ ঘটে থাকে স্বাভাবিক স্বতস্ফুর্ততায়। তো হতে পারে প্রেমই মানুষের জীবনের এমন এক ভর কেন্দ্র যা মানুষের জীবনকে নানা মাত্রিকতায় যাপনের উদ্‌যাপনের সাথে একীভূত হওয়ার শক্তি যোগায়।

প্রশ্ন ৬ : কোনো জাতি কতটা উন্নত তা বুঝা যায় সে দেশের শিল্পকলার স্বরূপ দেখে। এ-ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

আহমেদুর চৌধুরীহাহাহা! খুবই আগ্রহোদ্দীপক প্রশ্ন। এভাবে বিবেচনা করতে চাইলে তো বাড়ির টয়লেট দেখে কোনো পরিবারের জাত-বংশ-কুলীনতা নির্নয়ের মতো হয়ে যায়। নির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে উন্নতি বা মহানত্ব নির্ধারণ করার বহুল প্রচলিত প্রথার সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমি একাত্ম বোধ করি না। পৃথিবীর সব জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন এবং জীবনাচারণের মধ্যেই তাদের ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া ইত্যাদি সাপেক্ষে বৈচিত্রময় সংস্কৃতি, শিল্পকলা এবং নানা মাত্রার সৃজনশীলতার বিকাশ এবং প্রকাশ ঘটে। অতএব পাথর অধ্যুষিত এলাকার শিল্পকলা বা সংস্কৃতিকে বেলেমাটি অধ্যুষিত এলাকার সংস্কৃতি ও শিল্পকলা থেকে ‘উন্নত’, ‘মহান’ এই শব্দ দিয়ে আলাদা করার পক্ষপাতী আমি নই।   

প্রশ্ন  : সমসাময়িক কবিদেরকে কীভাবে মূল্যায়ন করেনতারা কি আপনার প্রতিদ্বদ্বী?

আহমেদুর চৌধুরী: আমি নিজেকে ‘কবি’ মনে করি না। আমি মূলত একজন কবিতা পাঠক। পাঠের সাথে সাথে মাঝে মধ্যে যেহেতু পছন্দের কবিদের কবিতা যোগাড় করে তা প্রকাশ করার আনন্দযজ্ঞের সাথেও যুক্ত এবং দুচার ছত্র লেখারও চেষ্টা করে থাকি, সেজন্য নিজেকে আমি কবিতা কর্মী হিসাবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমি লক্ষ্য করছি সমসাময়িক কবিরা অনেক বেশি হৃদয় স্পর্শ  করা এবং চিন্তা উসকে দেয়া কবিতা  লিখছেন। এই কবিতাগুলো আমার ব্যক্তিগত পাঠানুভুতিকে, কবিতা অনুধাবনের আবেগকে সাংঘাতিকভাবে আলোড়িত করে।  অনেকের কবিতায় ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজ  রুপক এবং গঠনে শিল্পের দারুণ সব মিশ্রণের আস্বাদ পাওয়া যায়। অবশ্য কিছু ভাল সম্ভাবনা জনপ্রিয়তার চক্করে পড়ে দারুণ সব কবিতা লেখার বৃত্ত থেকে ছিটকে পড়তেও লক্ষ্য করছি। তবে এক্সপেরিমেন্টাল কবিতা ইদানীং আমার চোখে কম পড়ছে।  না, আমি কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না। আমি জীবনে কখনো কিছু হতে চাইনি। ‘কবি’ অভিধায় অবিহিত হওয়ার অভিলাষ আমার ছিল  না, এখনও নেই। যে কারণে জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই  আমি কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে বিবেচনা করিনি। 

প্রশ্ন  : কবির ব্যক্তিগত জীবন ও কবিতাকে সাহিত্যের বিচারে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আহমেদুর চৌধুরীযেভাবেই বিচার করুন না কেন, কবির ব্যক্তিজীবন এবং কবিতা জীবন দ্বন্দমুখর, সংঘাতময়, বন্ধুর এবং রক্তাক্ত। মান্নাদের গান থেকে ধার করে বলা যায়, “শিল্পের জন্যই শিল্প শুধু, এছাড়া নেইকো তার অন্য জীবন..”।

প্রশ্ন  : আধুনিক কবিতায় জটিল ভাবপ্রকাশ এবং অধিকাংশ কবিতাই গদ্যে লেখা হয়। কেন?

আহমেদুর চৌধুরীদেখুন, এসব বিষয় একজন কবির মনস্তাত্ত্বিক রসায়ন, সমসামিয়কতা, প্রবণতা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। আমি লক্ষ্য করেছি সাম্প্রতিক সময়ে যারা কবিতা চর্চা করছেন তারা অনেক বেশি ছন্দানুগত, এবং গদ্য ফর্মের বাইরে গিয়ে কবিতা লেখার  চেষ্টা করছেন। তাদের কবিতায় আধুনিক সময় এবং জীবন যাপনের জটিলতাও মূর্ত হয়ে উঠছে প্রবলভাবে। অতএব জীবনের জটিল ভাব প্রকাশে গদ্য ফর্মের কবিতা এককভাবে কৃতিত্বের দাবিদার এমনটি আমি মনে করিনা। তারপরও কবিতা নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা হয়ত এই প্রশ্নের জবাব আরও বিস্তারিতভাবে দিতে পারবেন। কিন্তু আমি তো আর গবেষক নই।

প্রশ্ন ১০ : আপনার প্রিয় কবি কে এবং বিশেষ কেউ কি আছেন যাঁর প্রভাব আপনার কবিতায় পড়েছে? কেন?

আহমেদুর চৌধুরীবিভিন্ন সময়ে বিভিন্নজন আমার প্রিয় কবির তালিকায় উঠে এসেছেন। একেবারে কবিতা ভালোবাসার শুরুতে যে কয়জন প্রিয়কবি ছিলেন তাদের কয়েকজন এখনও সমানভাবে প্রিয় রয়ে গেছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের নাম মনে পড়ছে, শার্ল বোদলেয়ার (বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদে), জীবনানন্দ দাশ, আল মাহমুদ,  আর্ত্যুর র‍্যাঁবো ( সম্ভবত লোকনাথ ভট্টাচার্যের অনুবাদে), শক্তি চট্টোপাধ্যায়, অ্যাডোনিস, মাহমুদ দারবিশ এবং আরও অনেকে। এছাড়া আমি চেষ্টা করি আমার অগ্রজ, সমসাময়িক এবং তরুণ কবিদের কবিতা পড়তে। গেলো কয়েক বছরের মধ্যে আমি নরওয়ের বেশ কয়েকজন কবির কবিতা পড়ার সুযোগও পেয়েছি। এদের মধ্যে কয়েকজনের কবিতা বেশ দাগ কাটার মতো। 

প্রশ্ন ১ : কবি হিসেবে কীভাবে নিজেকে মূল্যায়ন করেন?

আহমেদুর চৌধুরীআমি নিজেকে একজন কবিতার পাঠক এবং কবিতা কর্মী হিসাবে অনুভব করি এবং বিবেচনা করি। যে কারণে কবি হিসাবে নিজেকে মূল্যায়িত করার দায়বোধের চাপ থেকে আমি মুক্ত এবং নির্ভার। আমি আমার চারপাশের পরিচিতজনদের, প্রাক্তন এবং বর্তমান বন্ধুদের কবি হয়ে উঠার লড়াই, সংগ্রাম এবং সাফল্য সংহতি এবং সহমর্মিতার সাথে আকণ্ঠ উদ্‌যাপন করি।

প্রশ্ন ১ : ভবিষ্যতের কবিতা কেমন হতে পারে বলে আপনার ধারণা?

আহমেদুর চৌধুরীআর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এর উৎকর্ষ কিছু কিছুক্ষেত্রে আমাকে উদ্বিগ্ন করে। এখন কবিযশপ্রার্থিরা যদি এআইকে নির্দেশ দিয়ে তথ্য ও ভাব ঘুটা  কবিতা উৎপাদন শুরু করেন তাহলে ট্রাডিশনাল পদ্ধতিতে লেখা কবিতা  হয়ত কিছু সময়ের জন্য থমকে দাঁড়াতে পারে। তবে আমি উপলব্ধি করি, মানুষকে তার নিজের কাছেই, অর্থাৎ তার নিজের চিন্তা, অনুভূতি, ভাষা ও প্রকাশ ভঙ্গি এবং দক্ষতার কাছেই ফিরে আসতে হবে। তো কবিতা তার নিজের পথেই হাঁটবে। যেমন করে এতটাকাল কবিতা হেঁটে এসেছে। নতুন ভাষা নির্মাণের চেষ্টার সাথে সাথে নতুনের সাথে পুরাতনের সার্থক সংশ্লেষ ঘটার মধ্য দিয়েই তৈরি হবে ভবিষ্যতের কবিতার ভাষা এবং ভঙ্গি।

প্রশ্ন ১ : কবির কি সামাজিক স্বীকৃতির দরকার আছেকেন?

আহমেদুর চৌধুরী: আমি ধারণা করি, অসামাজিকতা কবির ভূষণ। এই অসামাজিকতা খবরের কাগজে ব্যবহৃত ‘অসামাজিকতা’ অর্থে নয় কিন্তু। যিনি কবিতা লিখেন তার স্বীকৃতির তোয়াক্কা করার প্রয়োজন কেন পড়বে? একজন কবির জন্য তথাকথিত কোনো সামাজিক স্বীকৃতির দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। তবে সমাজকে তার অস্তিত্ব এবং কাঠামোর প্রয়োজনে কবিকে, লেখককে, শিল্পী এবং চিন্তককে স্বীকৃতি দিতে হয়, দেয়াটা জরুরি। এটা সমাজকাঠামোর দায়িত্ব। কবি বা শিল্পীর প্রয়োজন নয়।

সংলাপে সংরাগে; নির্বাচিত সৃজকের সাক্ষাৎকার সংকলন সম্পাদক: নাজমুল হক নাজু প্রকাশকাল: আগষ্ট ২০২৫ প্রকাশক: ঘাস, সিলেট

Scroll to Top